মেজোঠাকুরের গোষ্ঠী
বীরেশ্বরন্যায়ালঙ্কার ঠাকুরের মধ্যম পুত্র ও তাঁহার ধারার পরিচয়।
(ইঁহারা মেজোঠাকুরের গোষ্ঠী বলিয়া অভিহিত)
রামানন্দ সিদ্ধান্ত
বীরেশ্বরের মধ্যম পুত্র। ইনি পিতার উপযুক্ত সন্তান। ইঁহার ধর্ম্মনিষ্ঠা
অত্যধিক ছিল। তন্ত্রশাস্ত্রে বড় পণ্ডিত হইয়াছিলেন। তন্ত্রশাস্ত্রোক্ত ধর্ম্মকার্য্যাবলীর ন্যায় চিকিৎসা কার্য্যেও ইঁহার বিশিষ্টতা ছিল। দুঃসাধ্য কএকটি ব্যাধি তন্ত্রপ্রক্রিয়ানুসারে সারাইয়া যশস্বী হইয়াছিলেন। তন্ত্রালোচনাতেই ইনি জীবনাতিবাহিত করিয়াছেন। সমাজে মেজোঠাকুর বলিয়া খুব প্রতিপত্তি ছিল।
কালিদাস ঠাকুর
রামানন্দের জ্যেষ্ঠ পুত্র। সদাচারী সুপণ্ডিত ছিলেন। পিতৃ বিদ্যমানেই অকালে স্বর্গত হয়েন।
নীলকণ্ঠ ঠাকুর
কালিদাসের পুত্র। পিতৃহীন বলিয়া পিতামহ রামানন্দের বড়ই স্নেহভাজন
ছিলেন। পিতৃব্যেরাও স্নেহ করিতেন। পিতৃব্যগণের সম্মতিক্রমে পিতামহ ইঁহাকে দিয়া তাৎকালিক কতিপয় প্রবল আত্মীয় শিষ্যকে মন্ত্র দেওয়াইয়া ছিলেন।
রামমোহন ঠাকুর
নীলকণ্ঠের পুত্র। বংশোচিত অনুষ্ঠানান্বিত ছিলেন।
রামকানাই ঠাকুর
রামমোহনের পুত্র। বড় ধার্ম্মিক ছিলেন। দূর্গোৎসবাদি সৎকার্য্য বিশেষ শ্রদ্ধা ও সমারোহ-সহকারে করিতেন। সমাজে একজন অন্যতম সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি ছিলেন। বেশ দীর্ঘ জীবন লাভ করিয়াছিলেন। কানাই ঠাকুর বলিয়া ইনি কথিত হইতেন।
অক্ষয় কুমার ঠাকুর
রামকানাই ঠাকুরের জ্যেষ্ঠ পুত্র। আচারবান্ শান্ত স্বভাব ও বড় বিনয়ী ছিলেন।
কালাচাঁদ ঠাকুর
রামকানাই ঠাকুরের কনিষ্ঠ পুত্র। ধীর ও কর্ত্তব্যনিঠ ছিলেন।
রামনিধি ঠাকুর
রামানন্দের মধ্যম পুত্র। গুরূচিত পাণ্ডিত্য সম্পন্ন ছিলেন। ইঁহার ব্রহ্মনিষ্ঠার প্রভাবেই বরিশালে হাজার বিঘা ভূসম্পত্তি লাভ ঘটিয়াছিল। বংশধরেরা এখনও উহা ভোগ করিতেছেন।
সীতারাম ন্যায়ভূষণ
রামনিধির জ্যেষ্ঠ পুত্র। একজন বিশিষ্ট শাব্দিক পণ্ডিত ছিলেন। বিষয় বুদ্ধিও ইঁহার খুব প্রবল ছিল। যাহার বলে ইনি পৈতৃক দোরোর সম্পত্তি স্বনামানুসারে সীতাচক্ বলিয়া নির্দ্দিষ্ট করাইয়া লন।
রামার্ক সিদ্ধান্ত
সীতারামের জ্যেষ্ঠ পুত্র। ইনি ন্যায়শাস্ত্রে বড় পণ্ডিত হইয়াছিলেন। অনেক ছাত্র ইঁহার নিকট অধ্যয়ন করিয়া কৃতবিদ্য হন। পাণ্ডিত্যের সহিত সদ্গুণাবলীতেও ইনি ভূষিত ছিলেন। অনেক স্বজনকে ইনি প্রতিপালন করিয়া গিয়াছেন ও বড়ই কুটুম্ববৎসল ছিলেন।
রামসেবক ঠাকুর
রামার্ক ঠাকুরের জ্যেষ্ঠ পুত্র। বংশোচিত গুণসম্পন্ন ছিলেন। ইঁহার ধারা দৌহিত্রগত হইয়াছে।
রাখালদাস শিরোমণি
রামার্ক ঠাকুরের মধ্যম পুত্র। ব্যাকরণ জ্যোতিষ ও তন্ত্রশাস্ত্রে একজন
ভাল ব্যুৎপন্ন পণ্ডিত ছিলেন। ব্যাকরণের চতুষ্পাঠী ছিল। বহু ছাতের মধ্যে একজন ব্রহ্মচারী সন্ন্যাসী আসিয়া তাঁহার নিকট পাঠ স্বীকার করিয়াছিলেন। ইনি একজন নিষ্ঠাবান্ ও প্রিয় মধুরভাষী ছিলেন। মধ্য বয়সে ইঁহার দেহ যায়।
জনার্দ্দন বিদ্যাবাচস্পাতি
রামনিধি ঠাকুরের কনিষ্ঠ পুত্র। বিখ্যাত নৈয়ায়িক ছিলেন। ইঁহার বহু ছাত্রের মধ্যে এই বংশেরই অন্যতম উজ্জ্বলরত্ন স্বনামধন্য হলধর তর্কচূড়ামণি ইঁহারই ছাত্র ছিলেন। ভাটপাড়ার বর্ত্তমান তে ...
তাঁহাকেই উল্লেখ করিতে হয় কারণ এখনকার নৈয়ায়িকগণ তাঁহারই ছাত্র ও তচ্ছাত্রের ধারা। ইঁহার পূর্ব্বেও অনেকে নৈয়ায়িক ছিলেন বটে কিন্তু কাহারও ছাত্রধরা নাই। ইনি নিজে ছিলেন কাউগাছি নিবাসী বংশের শিশ্য দিকপাল সম প্রসিদ্ধ নৈয়ায়িক শঙ্কর? তর্কবাগীশের ছাত্র। সদাচারে ইনি একজন ঋষি ছিলেন।
শিশুরাম ঠাকুর
জনার্দ্দন বাচস্পতির মধ্যম পুত্র। বংশোচিত নিষ্ঠাবান্ ছিলেন।
রামসদয় ঠাকুর
শিশুরামের জ্যেষ্ঠ পুত্র। ইনি একজন বড় বাকপটু ও মজলিসী লোক
ছিলেন।
রমেশচন্দ্র ঠাকুর
রামসদয়ের পুত্র। শিশু পুত্র রাখিয়া পিতৃ বিদ্যমানেই ইনি দেহ ত্যাগ করেন। শান্ত শিষ্ট ব্যক্তি ছিলেন।
যদুরাম সার্ব্বভৌম
জনার্দ্দনের কনিষ্ঠ পুত্র। ইনি পিতার উপযুক্ত পুত্র ন্যায়শাস্ত্রে একজন
প্রসিদ্ধ পণ্ডিত। ইনি পিতার নিকট পাঠ আরম্ভ করেন ও অনেক দূর অগ্রসর হন, কিন্তু পিতার দেহন্ত ঘটায় পাঠ সমাপন করেন, ইঁহার পিতৃ-ছাত্র কৃতী হলধর তর্কচূড়ামণির নিকট। ইঁহার মেধাশক্তি ও বাগ্মিতা অনন্যসাধারণ ছিল। মেধার একটা কথা বলি, ইনি ৩০ বর্ষ বয়সে মদন পারিজাত নামক স্মৃতিগ্রন্থ একবার মাত্র পড়িয়া যান, ৫৫ বর্ষ বয়সে একটা স্মৃতি ঘটিত প্রশ্নের মীমাংসার জন্য তাঁহার কাছে লোকে উপস্থিত হয়, তিনি তখন কোথা হইতে সবে মাত্র নৌকা হইতে ঘাটে নামিয়াছেন। কি অদ্ভূত! যেমনি প্রশ্নটি শোনা আর অমনি মদন-পারিজাতের মীমাংসক বচনটি বলিয়া দেওয়া। শুধু বলা নয়, কোন তরঙ্গের কোন স্থানে উহা আছে তাহাও উল্লেখ করেন। লোকে পরে গ্রন্থ খুলিয়া দেখে হুবহু ঠিক। ইঁহার বাগ্মিতায় অনেক সম্ভ্রান্ত ধনী ব্যক্তি ইঁহাকে বিশেষ শ্রদ্ধা করিতেন। তেলিনীপাড়ার বাবু রামধন বন্দ্যোপাধ্যায় ইঁহার একজন ভক্ত ছিলেন। নড়ালের প্রসিদ্ধ ভূস্বামী রতন রায় ইঁহাকে ভক্তি করিয়া সামান্য কর ধার্য্যে একটি গাঁথি দেন (বর্ত্তমানে উহা বংশধরদের অধিকার চ্যুত হইয়াছে), উনি গোবরডাঙ্গার ভূস্বামীর নিকট হইতে ভূসম্পত্তি দান প্রাপ্ত হন। ইনি আকারে ও স্বভাবে বড়ই মধুর ছিলেন, ছাত্রবৎসলতা ইঁহার খুব প্রবল ছিল এবং ভ্রাতৃগণকে লইয়া একান্নবর্ত্তি পরিবারে খুব আনন্দের সহিত সংসার করিয়া গিয়াছেন।
বীরেশ্বর ঠাকুর
যদুরাম সার্ব্বভৌমের পুত্র। পত্নীকে পোষ্যপুত্র লইবার অনুমতি দিয়া অকালে ইনি দেহ ত্যাগ করেন।
বিপিনচন্দ্র ঠাকুর
বীরেশ্বরের পোষ্যপুত্র। ইনিও শিশু পুত্র রাখিয়া অকালে স্বর্গত হইয়াছে।
রামশঙ্কর তর্কর্ব্বাগীশ
রামানন্দের কনিষ্ঠ পুত্র। ইনি একজন বড় পণ্ডিত হইয়াছিলেন ও অত্যন্ত পিতৃভক্ত ছিলেন। পিতৃবর প্রসাদে ইঁহার সংসার খুব সুখের ছিল। বাং ১২০৯ সালে নিজ বাস্তুর ঈশান কোণে ইনি দুটি শিবমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। ঐ মন্দিরের লিঙ্গদ্বয় কষ্টি পাথরের নির্ম্মিত। মন্দির দুটিকে এখন জোড়ামন্দির বলা হয় ও শিবদ্বয়ের নিত্যপূজা হয়। পানিহাটীর জমীদার প্রাণকৃষ্ণ চৌধুরী ইঁহার অন্যতম প্রধান শিষ্য ছিলেন। এক সময়ে ইনি এই ভক্ত শিষ্যের সাহায্যে একজন প্রবল জ্ঞাতির কবল হইতে নিজ বাস্তু সংলগ্ন কয়েক বিঘা জমী রক্ষা করিবার জন্য এক রাত্রির মধ্যে একশত হস্ত দীর্ঘ ও ৬ হাত উচ্চ এক ইষ্টক প্রাচীর দেওয়াইয়া ছিলেন। এমন নিঃশব্দে উহা হইয়াছিল যে কেহ কিছু জানিতে পারে নাই। মুখোপাধ্যায় মহাশয় বোটে করিয়া জন মজুর ও ইষ্টক প্রভৃতি দ্রব্যাদি এমন ভাবে মজুত করিয়া আনিয়া ছিলেন যে কার্য্যটি সম্পন্ন হইতে কোন বেগ হয় নাই।
রামরতন ঠাকুর
রামশঙ্করের জ্যেষ্ঠ পুত্র। গুরূচিত গুণগ্রামে ভূষিত ছিলেন। ইঁহার মৃত্যু হইলে ইঁহার পত্নী ভাগীরথীদেবী কনিষ্ঠ পুত্রের পালন ভার জ্যেষ্ঠ পুত্রবধূর হস্তে ন্যস্ত করিয়া সহমরণে যান। প্রবাদ আছে ঐ সহমরণক্ষেত্রে ফরাশী গভর্ণর ফরাসডাঙ্গা হইতে আসিয়া তাঁহাকে নিবৃত্ত করিতে চেষ্টা করেন কিন্তু কৃতকার্য্য হইতে পারেন নাই।
রামেন্দ্র ঠাকুর
রামরতনের জ্যেষ্ঠ পুত্র। বংশোচিত আচারানুষ্ঠানবান্ ছিলেন।
কমল ঠাকুর
রামেন্দ্র ঠাকুরের পুত্র। গুরূচিত গুণসম্পন্ন ছিলেন।
অমৃতময় বিদ্যারত্ন
কমল ঠাকুরের পুত্র। কাব্যালঙ্কারে ভাল পণ্ডিত হইয়াছিলেন। সুরূপ সদাচারী এই ধীমান্ অনেক ছাত্রকে বিদ্যাদান করিয়া গিয়াছেন। অকালে অপুত্রক অবস্থার ইঁহার দেহান্ত হয়। ভাটপাড়া ইঁহাকে হারাইয়া ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছে।
তারকনাথ ঠাকুর
রামরতনের কনিষ্ঠ পুত্র। ইঁহারই শৈশবে ইঁহার মাতা পতির সহমৃতা হন। গুরূচিতগুণগ্রামে ভূষিত হইয়া ইনি বেশ সম্ভ্রমের সহিত সংসার করিয়া গিয়াছেন। ইঁহার সম্পত্তি ও ধারা দৌহিত্রগত হইয়াছে।
পদ্মনাভ শিরোমণি
রামশঙ্কর তর্কবাগীশের মধ্যম পুত্র। অতি সুপুরুষ ছিলেন, তাঁহার ঋষি বৃত্তিতায় সমাজ উজ্জ্বল হইয়াছিল। সেই প্রিয় মধুর্ভাষী পরোপকারপরায়ণ মহাত্মার গুণে লোকে নিতান্ত মুগ্ধ ছিল।
ঈশ্বরচন্দ্র ঠাকুর
পদ্মনাভের পুত্র। বড় তেজস্বী ছিলেন, গতানুগতিকতা ভালবাসিতেন না,
অনভিমত কোন কার্য্য দেখিলে ক্রুদ্ধ হইতেন। বংশমর্য্যাদা ও ঋষি বৃত্তি রক্ষা কল্পে নিতান্ত আগ্রহী ছিলেন, শিষ্যেরা তাঁহার সাত্বিক ব্যবহারে তাঁহাতে বড়ই অনুরক্ত ছিলেন।
রামরাম ঠাকুর
ঈশ্বর ঠাকুরের জ্যেষ্ঠ পুত্র। বড়ই প্রিয়দর্শন মিষ্টভাষী ও বিশিষ্ট বুদ্ধিমান্
ছিলেন। যেমন মহাদেবের মতন প্রকৃতি ছিল, তেমনি কাশীধামে দেহ ত্যাগ করিয়া তিনি বিশ্বেশ্বরে লীন হইয়া যান।
রামনারায়ণ ঠাকুর
ঈশ্বর ঠাকুরের মধ্যম পুত্র। একজন তপস্বী বিশেষ। শেষ বয়সে ঋষির মতই জীবন কাটাইতেন। সর্ব্বদা উপনিষদ্ প্রসঙ্গেই কাল যাপন করিতেন। ভক্ত কবি ছিলেন, বহুবিধ স্তোত্র তিনি নিজে রচনা করিয়া ভগবানের আরাধনা করিতেন। গৃহত্যাগ করতঃ গঙ্গাবাস ও কঠোর ব্রত আচরণ করিয়া গঙ্গাতেই দেহ রক্ষা করেন। ইঁহারও ধারা দৌহিত্রগত।
রজনী নাথ ঠাকুর
ঈশ্বর ঠাকুরের তৃতীয় পুত্র। সুরূপ ও সুদীর্ঘাকার এই পুরুষ বংশোচিত গুণে গুণবান্ হইয়া মধ্য বয়সেই গঙ্গালাভ করেন।
রামকুমার ঠাকুর
রামশঙ্কর ঠাকুরের তৃতীয় পুত্র। বংশোচিত গুণসম্পন্ন ছিলেন।
হর ঠাকুর
রাম কুমারের পুত্র। বংশের যোগ্য সন্তান ছিলেন।
রামবিষ্ণু ঠাকুর
হর ঠাকুরের পুত্র। বংশের উপযুক্ত পাত্র।
যদুপতি ঠাকুর
রামবিষ্ণুর পোষ্যপুত্র। বড় আমুদে লোক ছিলেন, সংস্কৃত নাটকে তাঁহার খুব উৎসাহ ছিল।
রামদাস ঠাকুর
রামশঙ্করের কনিষ্ঠ পুত্র। সরল প্রকৃতি ও সাংসারিক বুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন। তাঁহার অর্থবত্তা ছিল।
উত্তম ঠাকুর
রামদাসের জ্যোষ্ঠ পুত্র। উত্তম-তো উত্তমই ছিলেন।
রামময় ঠাকুর
উত্তম ঠাকুরের পুত্র। বড় শান্ত সুরূপ মিষ্টভাষী পুরুষ ছিলেন। বংশগৌরব রক্ষা করিতেন। পুত্রে ইঁহার পুণ্য প্রকাশ পাইয়াছে।
চতুর্ভুজ ঠাকুর
রামদাসের মধ্যম পুত্র। একজন বেশ বিচক্ষণ ব্যক্তি ছিলেন।
ভূতনাথ ঠাকুর
চতুর্ভুজের পুত্র। ভূতনাথের মতনই তাঁহার স্বভাব ছিল। খুব বলিষ্ঠ ছিলেন।
কালীকল্প ঠাকুর
রামদাসের কনিষ্ঠ পুত্র। অতি শান্ত স্বভাব প্রিয় মধুরভাষী ও ধর্ম্মবিশ্বাসী ছিলেন।